ভারতে তোপের মুখে গুগল





ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিন গুগল ভারতে তাদের একচেটিয়া দাপটকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে।

ভারতের বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটের অভিযোগের ভিত্তিতে সে দেশের কম্পিটিশন কমিশন গুগলের এ ধরনের অসঙ্গত আচরণের প্রমাণ পেয়েছে, তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগে গুগল ইন্ডিয়া-ও তাদের বক্তব্য জানানোর সুযোগ পাবে।

ভারতে ফ্লিপকার্ট, ফেসবুক বা মেকমাইট্রিপ-সহ অনেকগুলো ওয়েবসাইট গুগলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে সামিল হয়েছে।

ভারতে গুগলের বিরুদ্ধে আনফেয়ার প্র্যাকটিস বা অনৈতিক আচরণের অভিযোগে তদন্ত চলেছে টানা তিন বছর ধরে।

সেই তদন্তের শেষেই কম্পিটিশন কমিশন অব ইন্ডিয়া মনে করছে, ভারতে যেভাবে গুগল তাদের সার্চ রেজাল্টগুলোকে তুলে ধরে সেটাকে পুরোপুরি ন্যায়সঙ্গত বলা যাবে না।

কমিশনের মুখপাত্র ডি এস মালিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বাজারে গুগলের আধিপত্য প্রশ্নাতীত – কিন্তু আমাদের কাছে বেশ কিছু সংস্থা অভিযোগ করেছিল অন্যায়ভাবে ফায়দা লুটতে গুগল তাদের সেই অবস্থানের অপব্যবহার করছে।’

‘তার ভিত্তিতে গত বছরই আমরা গুগলকে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু গুগল সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। আমাদের সিদ্ধান্ত কেন ও কোন পটভূমিতে নেওয়া, তার ব্যাখ্যা অবশ্য আমরা ওয়েবসাইটেই দিয়েছি। কিন্তু এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি’, জানান মি মালিক।
মামলার শুনানিতে গুগল তাদের বক্তব্য পেশ করার পরই স্থির হবে তারা এই মামলায় সত্যি দোষী কি না, বা দোষী হলে তাদের কী শাস্তি হবে।

তবে ২০১২ সালে গুগলের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগটি পেশ করেছিল যারা সেই ভারত ম্যাট্রিমোনি.কম-সহ আরও বহু ওয়েবসাইটই আত্মবিশ্বাসী যে গুগলের দোষটা প্রমাণ করা কঠিন নয়।

গুগলের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগটা ঠিক কী , তা ব্যাখ্যা করে দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরী বলেন, ‘অনেক সময়ই দেখা যেত ইন্ডিয়া-স্পেসিফিক সার্চেও এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইটগুলো আসত অনেক পরের দিকে। সেখনে থেকেই এই সন্দেহের সূত্রপাত যে, গুগল যে সাইটগুলো থেকে রাজস্ব পায় তাদের হয়তো সার্চে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

তাদের সার্চ রেজাল্ট যে বরাবর ‘ফেয়ার’-ই ছিল এটা প্রমাণ করার জন্য গুগল দিন-দশেক সময় পাবে, তারপর ১৭ সেপ্টেম্বর গুগলের আইনজীবীদের হাজির হতে হবে কম্পিটিশন কমিশনের চেয়ারম্যান অশোক চাওলাসহ সাত সদস্যের পূর্ণ বেঞ্চের সামনে।

সানফ্রান্সিকো-ভিত্তিক গুগল যদিও দাবি করেছে ভারতে তারা কোনও অন্যায় করেনি, কিন্তু কমিশনে গুগল নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে কি না জয়ন্ত রায়চৌধুরী সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নন।

এর প্রধান কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নেও গুগলের বিরুদ্ধে ওঠা একই ধরনের অভিযোগে তারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।

অপরাধ প্রমাণিত হলে ভারতের এই কম্পিটিশন কমিশন গুগলের মোট আয়ের ১০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা করতে পারে, ব্যবস্থা নিতে পারে সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও।

সেই রায়ের বিরুদ্ধে অবশ্য তাদের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।

কিন্তু ইউরোপে অনুরূপ মামলায় হারার পর ভারতের সম্ভাবনাময় বাজারেও যে এখন গুগল ভীষণ চাপের মুখে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।


Comments

Popular Posts